সুমন বড়ুয়া:
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থানার অন্তর্গত প্রকৃতির অপার সাজে সজ্জিত একটি ইউনিয়ন কুমিরা যার পশ্চিমে বিশাল সমুদ্র আর পূর্বে রয়েছে সবুজ পাহাড়। এই পাহাড়ের গহীনে বহু বছর ধরে বসবাস করে আসছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ত্রিপুরাবাসী।বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ,আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত ও সমতল ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী।কৃষি নির্ভরশীল এ গোষ্ঠী মৌসুমী শাকসবজি শিম, টমেটো, লাউসহ নানা জাতের সবজি উৎপাদন করে তারা দেশের খাদ্য যোগানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এমন এক শত পরিবার নিয়ে গড়া এই ত্রিপুরা পল্লীতে ১৪৩২ বঙ্গাব্দে অনুষ্ঠিত হলো শারদীয় দুর্গোৎসব। এবারের এই দুর্গাপূজা এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কারণ পাহাড়ের দুর্গম পথ, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, রেললাইনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে বিশাল প্রতিমা পাহাড়চূড়ায় পৌঁছে দেওয়া ছিল ভীষণ কষ্টকর ও চ্যলেঞ্জিং। কিন্তু ভক্তি ও বিশ্বাসের কাছে সব বাধা যেন তুচ্ছ।
কুমিরা ইউনিয়ন পূজা পরিষদের উদ্যোগে আর্কিটেক্ট ধ্রুব কুমার দাশ এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এ পূজায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রতন কুমার মজুমদার, সহ-সভাপতি হিসেবে টুটুল চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক হিসেবে সঞ্জয় সানি, দপ্তর সম্পাদক হিসেবে অন্তু দে ও মানটি দে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ৬নং ওয়াড বিএনপির সভাপতি কামাল , সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ২ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আমজাদ হোসেন টিটু,কুমিরা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি ফখরুল হোসেন সহ অন্যান্য ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ পূজার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করেন।
পূজা উপলক্ষে পাহাড়ের উপরে দুর্গা মন্দির প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছিল ত্রিপুরা পল্লীর শিশু, বৃদ্ধ ও নারী-পুরুষ। একদিকে ভক্তিগীতির সুর অন্যদিকে দীপশিখার আলোতে মন্দির চত্বর ভরে উঠেছিল এক অনন্য আধ্যাত্মিক আবহে। পূজা মণ্ডপের সভাপতি ও সম্পাদকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল বিমল ত্রিপুরা, করিম ত্রিপুরা, লক্ষণ ত্রিপুরার মতো স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা। তাদের প্রচেষ্টায় এই পূজো হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
এক সময় দুর্গোৎসব কেবল ধনী মহাজনদের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে থাকলেও কিন্তু আজ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভক্তি শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আগামী প্রজন্মকে শক্তি ও অনুপ্রেরণা জোগানোর পাশাপাশি ধর্মীয় জ্ঞান প্রদানেরও এক মহান দৃষ্টান্ত।
পূজায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ত্রিপুরা পল্লীর নারীরা নাট্যপ্রদর্শনী “মহিষাসুরমর্দিনী” উপস্থাপন করেন, যা পূজা উৎসবে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
সব মণ্ডপ পরিক্রমায় বিচার-বিশ্লেষণের পর ২০২৫ (১৪৩২ বঙ্গাব্দ) সালের দুর্গোৎসবে প্রথম স্থান অধিকার করে ত্রিপুরা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির। এটি শুধু একটি পুরস্কার নয়, বরং সংগ্রাম, ভক্তি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মিলিত স্বীকৃতি।